Thursday, May 30, 2019

গ্রামাউস এর উদ্যোগে অসহায় দরিদ্র কৃষকদের সহায়তায় কৃষক সহায়তা (কর্জে হাসানা) তহবিল গঠন। একটি অনুপ্রেরনা এবং একটি ব্যতিক্রমী মহান উদ্যোগ


কৃষি প্রধান আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষের প্রধান পেশা কৃষি হলেও বর্তমান বাস্তবতায় এই কৃষকরাই সবচাইতে অবহেলিত। একদিকে কৃষি পণ্যের আকাশচুম্বি মূল্য অন্যদিকে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্যহ্রাস এদেশের কৃষকদের যেমন কৃষি পণ্য উৎপাদনের আগ্রহ নষ্ট করে ফেলছে অন্যদিকে এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলো দিন দিন গরিব থেকে গরিবতর হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এভাবেই দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আমার দেশের সোনালী এতিহ্য। পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, ক্ষেত ভরা ধান এখন শুধুই রুপকথার গল্প। এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত মানুষেরা যেন সেই রুপকথার কুশিলব।

এখন বোরো মৌসুম চলছে, এই মৌসুমটা হচ্ছে বাংলাদেশ এর কৃষকদের বহু আকাঙ্খার মৌসুম। একজন কৃষক সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে এই মৌসুমের জন্য। তারা আশায় বুক বাধে আর স্বপ্ন দেখে এই মৌসুম এর উৎপাদন নিয়ে। কিন্তু বাস্তব যেন তার উল্টো বার্তা নিয়ে আগেই বসে থাকে। চলতি বছরে সেই উল্টো বার্তার রকমটা আরো ভিন্ন রূপে এবং ভয়াবহ আকারে হাজির  হয়েছে কৃষকদের সামনে, এ যেন সাক্ষাত যমদূত। যে কৃষক তার সমস্ত মূলধন খাটিয়ে এবং বেশিরভাগ কৃষকই বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারকর্জ্য করে বোরো ফসল ফলায় আর আশায় থাকে ভাল একটা ফলন হবে সেই ধান বিক্রি করে ধার পরিশোধ করবে আর দুমুঠো ভাতের জোগার করবে কিন্তু বাস্তবে ঘটল তার উল্টোটা। হঠাৎ করেই যেন ধানের মূল্য কমতে কমতে এমন এক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকল যে উৎপাদন খরচের অর্ধেক মূল্য পাওয়ার নিশ্চয়তাও পেলনা কৃষক। সারা দেশের কৃষকের মধ্যে হাহাকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে গেছে। বহু কষ্টে উৎপাদিত ধান নিজের গোলায় ভরার জন্য যে খরচাপাতির দরকার বেশিরভাগ কৃষকই তা জোগাড় করতে পারছেনা। যার ফলে তার স্বপ্ন কে সেই ধান ক্ষেতেই কবর দিয়ে চরম এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত কে বুকে আগলে রেখে হাহাকার করছে। বেঁচে থাকার নূন্যতম সম্বলটুকুও আর অবশিষ্ট থাকলোনা তাদের।  

কৃষি এবং কৃষকদের নিয়েই গ্রামাউস এর সৃষ্টি। কৃষি উন্নয়ন এবং অসহায় কৃষকদের সহায়তা করতে বরাবরই গ্রামাউস বিভিন্ন ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যেগ গ্রহণ করে অসহায় কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি মৌসুমে এই প্রান্তিক চাষীদের পাশে দাড়িয়ে বিনামূল্যে তাদের জমির ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এক মহান নজির সৃষ্টি করেছে। ঘটনাটি নাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের বিত্তশালীদের। 


বিবেকের তাড়নায় বহু উদারমনের মানুষ এই সমস্ত অসহায় কৃষকদের পাশে দাড়ানোর অনুপ্রেরনা লাভ করে তাদের জন্য কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা করতে থাকে আর এই সমস্ত উদার মনের বিত্তশালীদের সংগঠিত করার কাজটিও করেন গ্রামাউস এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ আব্দুল খালেক। তারই ধারাবাহিকতায় ফুলপুর এর বিত্তশালী সুশীল সমাজ, স্থানীয় সাংবাদিক এবং গ্রামাউস মিলে কৃষকদের এই দূর্যোগ মোকাবেলায় গঠন করেন কৃষক সহায়তা তহবিল। ইসলাম ধর্মে কাউকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের নিয়ম মেনে যা কর্জ্যে হাসানা নামে পরিচিত। 


স্থানীয় অসহায় এবং দরিদ্র কৃষকদের বাছাই করে এই তহবিল থেকে বিনা সূদে নগদ অর্থ দিয়ে উদ্ভূত এই দূর্যোগ মোকাবেলায় কৃষকদের পাশে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আওতায় ফুলপুর উপজেলায় বাছাইকৃত ১০০ জন প্রান্তিক কৃষকদের বাছাই করে উৎপাদিত বোরো ফসল কাটা এবং ঘরে তোলার খরচ মেটানোর জন্য ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা করে প্রদান করা হয় যাতে করে তাদের উৎপাদিত ধান বর্তমান মূল্যে বিক্রি করতে না হয়। পরবর্তীতে ধানের মূল্য বৃদ্ধি পেলে যেন সেই ধান বিক্রি করে কৃষকরা এই ধার পরিশোধ করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই গঠন করা হয় এই তহবিল। 

কৃষক সহায়তা তহবিল শুধুমাত্র ফুলপুর উপজেলার কৃষকদের পাশে দাড়ানো নয় সমগ্র বাংলাদেশের বিত্তশালী মানুষদের মধ্যে অনুপ্রেরনার উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করাই এর লক্ষ্য। কেননা কৃষিই আমাদের প্রধান শক্তি, কৃষকরাই আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি আর কৃষকরা ভাল থাকলেই ভাল থাকবে বাংলাদেশ। 

No comments:

Post a Comment