Sunday, June 9, 2019

ভিক্ষুক আকিকুল মিয়া এখন উদ্যোমী আকিকুল - জীবন যুদ্ধে সফলতার গল্প

“আগে আমি জীবনে আন্ধাইর দেখতাম অহন হলক দেহি” কথাগুলো পঞ্চাশধোর্ধ গৃহিনী দোলেনা বেগমের। চোখে মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ, চাহনিতে আতœবিশ্বাসের ঝলক এবং কণ্ঠস্বরে আতœশক্তিতে বুলয়ান ও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা একজন গৃহকর্মী দোলেনা বেগম।

দোলেনা বেগমের স্বামী মোঃ আকিকুল ইসলাম ঠিকানা ঃ ফুলপুর উপজেলার ৫ নং ফুলপুর ইউনিয়ন এর চর পশ্চিম বাখাই। জীবনের প্রয়োজন এবং পরিস্থিতির শিকার হয়ে একসময় ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিতে হয়েছিল। ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি প্রচন্ড ঘৃনা থাকলেও কিছুতেই বেরোতে পারছিলনা সে ঘন্ডি থেকে। একটা বলয়ের মধ্যে আটকা পড়েছিল দিন দিন। ক্রমশই ছোট হয়ে আসছিল নিজের পৃধিবী, আত্বীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাই আকিকুলকে ভিক্ষুক হিসাবেই মেনে নিয়ে ঐভাবেই মূল্যায়ন শুরু করেছিল। কিন্তু মেনে নিতে পারেনি আকিকুল নিজে এবং তার স্ত্রী দোলেনা বেগম। প্রবাদে বলে “ ভিক্ষার চাল যার পেটে যায় সে নাকি কোটিপতি হলেও আর ভিক্ষা ছাড়তে পারেনা” কথাটা অনেকাংশে সত্যি হলেও আমাদের আকিকুলের জন্য এই প্রবাদটা প্রযোজ্য ছিলনা। আকিকুল মিয়ার ছিল এই চীবন থেকে বের হবার প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি এবং সংসার জীবনে ৩ ছেলে এবং ২ মেয়ের জননী দোলেনা বেগমের অনুপ্রেরনা। শুধুমাত্র প্রয়োজন ছিল একটু সাপোর্ট একটু ধাক্কা...
২০১০ সালে গ্রামাউস ৫ নং ফুলপুর ইউনিয়নে সমৃদ্ধি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নানামূখি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ধীরে ধীরে  ৫ নং ফুলপুর বাসীর মনে আস্থার জায়গায় স্থান করে নেয় । ৫ নং ফুলপুরের গিডি প্রকল্পে স্থাপিত হয় সমৃদ্ধি প্রকল্প অফিস। আর আকিকুল মিয়ার জন্য জীবন বদলে দেওয়া সেই বার্তা-টা গ্রামাউস থেকেই আসে। সমৃদ্ধি কর্মসূচির ভিক্ষুক পূর্নবাসন কার্যক্রমের প্রথম ধাপে ৫ জন ভিক্ষুকের মধ্যে আকিকুলও একজন যাদের প্রত্যেককে পূনবাসনের জন্য ১ লক্ষ করে টাকা প্রদান করা হবে। ঠিক এই টার জন্যই অপেক্ষা করছিল আকিকুল ও দোলেনা বেগম। শুরু হয় জীবনের আরেকটা নতুন অধ্যায় । ১ লক্ষ টাকা  অনুদান হিসাবে প্রাপ্ত হয়ে গ্রামাউস  এর কর্মীদের সহায়তায় আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রম এর মধ্যে ৬০০০০/- টাকা দিয়ে ১টি গাভি, ২০০০/- টাকার হাঁস মুরগী ক্রয় করেন। দোলেনা বেগম নিজেও স্বামীর সাথে অংশগ্রহণ করতে চায় জীবনের এই যুদ্ধে। ৮০০০/- টাকা খরচ করে শুরু করে ফেরী ব্যবসা। মাথায় করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিক্রয় করতে থাকে। ভাগ্যের চাকা তখন আপনা আপনিই ঘুরতে থাকে।

ভিক্ষুক আকিকুল থেকে উদ্যোমী আকিকুল হয়ে উঠার সাথে জীবনের অন্ধকার বলয়টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে। জীবনটা এখন আর আগের মতো একঘেয়ে লাগেনা। আস্তে আস্তে সামাজিক স্বীকৃতিও মিলতে থাকে আর তারই ফল সরূপ স্থানীয় মসজিদের মেয়াজ্জিনের দায়িত্ব দেওয়া হয় আকিকুল ইসলাম কে।

ভিক্ষাবৃত্তির আসক্তি আকিকুল ইসলামকে গ্রাস করে খেয়ে ফেলতে পারেনি চির জীবনের জন্য । সে চেয়েছিল এই বলয় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে। তার সাথে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল গ্রামাউস এবং পিকেএসএফ। সার্বক্ষনিক মানসিকভাবে শক্তি সাহস দিয়ে এবং নিজে পরিশ্রম করে স্ত্রী দোলেনা বেগম স্বামীর সম্মান ফেরাতে সহায়তা করেছেন এবং সেই সাথে নিজেও হয়েছেন আত্ব-বিশ্বাসী, আতœ-প্রত্যয়ী এবং আপন আলোয় আলোকিত একজন মানুষ।

No comments:

Post a Comment